ভারতীয়দের বাধায় সিলেট বিভাগের তিন শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের আপত্তিতে সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি হচ্ছে না। ফলে স্থবির হয়ে আছে এসব বন্দর ও শুল্ক স্টেশন।
জানা যায়, ভারতের আসাম রাজ্যের শ্রীভূমিতে (করিমগঞ্জ) সনাতনী ঐক্য মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের বিক্ষোভের মুখে গত রোববার সিলেটের বিয়ানীবাজারের শেওলা স্থলবন্দর ও সোমবার জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশন দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে ভারতীয়দের বিক্ষোভের কারণে গত ৩০ নভেম্বর থেকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে শুল্কায়ন জটিলতায় তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।
আমদানিকারক সূত্র জানায়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ ও ইসকন থেকে বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গত রোববার ভারতের শ্রীভূমি জেলার সুতারকান্দি স্থলবন্দরে মিছিল নিয়ে জড়ো হয় কয়েক শ’ লোক। তারা সীমান্ত এলাকায় বিক্ষোভ করে। পরে ভারতীয় বিক্ষোভকারীরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে সুতারকান্দি (বাংলাদেশের শেওলা) স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়।
সোমবার একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ভারতের করিমগঞ্জ শুল্ক স্টেশনে। ফলে সোমবার থেকে ওই স্টেশন দিয়েও আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে পণ্য পরিমাপ সংক্রান্ত জটিলতায় গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ভারতের ডাউকি স্থলবন্দর (বাংলাদেশের তামাবিল) দিয়ে পাথর-চুনাপাথর আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।
এই বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তামাবিল ও শেওলা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে যে পাথর আমদানি করা হয় তা সরাসরি খনি থেকে ট্রাকে লোড করা হয়। ফলে পাথরের সঙ্গে মাটি ও বালি মিশ্রিত থাকে। আগে শুল্কায়নের পূর্বে বন্দর কর্তৃপক্ষ মাটি ও বালির ওজন বাদ দিয়ে পাথরের ওজন নির্ণয় করত। কিন্তু বর্তমানে স্থলবন্দরের নতুন কর্মকর্তারা মাটি ও বালির ওজন ছাড় না দেয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে।
ওয়েট স্কেলে কড়াকড়ি ওজন নির্ণয়ের কারণে কয়লা-পাথর আমদানি থেকে বিরত রয়েছেন জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, এ অবস্থায় আমদানি অব্যাহত রাখলে পাথরবাহী প্রতি ট্রাকে ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হবে। বিষয়টি নিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললেও কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না বলে জানান তারা।
আমদানি-রপ্তানি বন্ধ, সিলেটের চার স্থলবন্দরে স্থবিরতা
তামাবিল কয়লা, পাথর ও চুনাপাথর আমদানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস উদ্দিন লিপু বলেন, ‘ওজন জটিলতায় আমরা পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছি। লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেও পাথর আমদানি করতে গিয়ে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
‘আমদানি বন্ধ থাকায় ওপারে ভারতে কয়লা-পাথরবাহী শত শত ট্রাক লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এখন রপ্তানিকারকরা আমাদের কাছে পণ্যবাহী ট্রাকের ক্ষতিপূরণ দাবি করছে।’
তামাবিল কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা তানভির হোসেন বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানি বন্ধ রাখায় এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
তামাবিল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় কয়লা-পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। আমরা কয়লা-পাথর ব্যবসায়ীদের সমস্যার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।’
এদিকে ভারতীয়দের বাধায় অন্য সীমান্ত দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হওয়া প্রসঙ্গে সিলেট পাথর আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি আতিক হোসেন বলেন, ‘ইসকন ইস্যুতে ভারতের সুতারকান্দি ও করিমগঞ্জ বর্ডার দিয়ে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। ভারতীয় লোকজনের বাধার মুখে ভারত থেকে বাংলাদেশে কিংবা বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্যবাহী গাড়ি ঢুকতে পারছে না।’
তিনি জানান, মঙ্গলবার পর্যন্ত ভারতের সুতারকান্দিতে পাথরসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী অন্তত দুশ’ ট্রাক এবং এপারে শেওলা শুল্ক স্টেশনে অর্ধশতাধিক ট্রাক আটকা পড়েছে। এছাড়া সিলেটের জকিগঞ্জের ওপারে ভারতের করিমগঞ্জে আটকা পড়েছে ফল ও কাঁচামাল বোঝাই অর্ধশতাধিক ট্রাক। পণ্য খালাস না হওয়ায় ট্রাকে ফলসহ কাঁচামাল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, বর্ডারে পণ্য আটকা পড়ায় ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। প্রতিদিনই আমদানিকারকদের ব্যাংক ঋণের সুদ গুনতে হচ্ছে। এছাড়া পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ থাকায় লোড-আনালোড এবং স্থানীয় পাথরভাঙার কলগুলোর হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
বিয়ানীবাজারের শেওলা স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এই বন্দর দিয়ে মূলত কয়লা ও পাথর আমদানি হয়। আর রপ্তানি হয় ভোগ্যপণ্য, সিমেন্টসহ কিছু পণ্য। তবে ভারত সীমান্তে সমস্যার কারণে তিনদিন ধরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।’
এদিকে জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আরিফ উদ্দিন বলেন, ‘এই স্টেশন দিয়ে মূলত কমলাসহ কিছু ফলমূল আমদানি হয়। তবে সোমবার থেকে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি।’