বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থেকে আগত ও বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থানরত সাবেক মানবাধিকার স্বেচ্ছাসেবক আবদুল্লাহ আলমামুন আওয়ামী লীগ এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এর সদস্যদের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন, রাজনৈতিক হয়রানি এবং গুমের হুমকির অভিযোগ করেছেন।
এক একান্ত সাক্ষাৎকারে মামুন বলেন, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে কুলাউড়ায় বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ব্যানারে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এই সভার উদ্দেশ্য ছিল বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং রাষ্ট্রীয় মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।
“আমার চাচা বেলাল আহমদের নেতৃত্বে আমি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছিলাম। আমরা যখন লিফলেট বিতরণ করছিলাম, তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. মমদুদ হোসেন আমাদের হুমকি দেন সভা বাতিল করতে। প্রতিবাদের দিন, কিছু সশস্ত্রলোক আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমাকে ধরে পিটিয়ে অচেতন করে ফেলে,” বলেন মামুন।
তিনি তাঁর শারীরিক আঘাতের ছবি ও সিলেট এম. এ. জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা প্রতিবেদন ও আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেন। সুস্থ হওয়ার পর মামুন স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়েরের চেষ্টা করেন, কিন্তু এস আই জয়ন্ত কুমার দাস মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং তাঁদের “সরকার বিরোধী” বলে অপবাদ দেন।
পরে মামুন আদালতের মাধ্যমে ১১ মার্চ ২০২১ তারিখে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন। মামলার পর হুমকির মাত্রা আরও বেড়ে যায়। “মমদুদ সাহেব আমাকে বলেন যদি আমি মামলা তুলে না নেই, তাহলে র্যাব দিয়ে আমাকে গুম করে দিবেন। এরপর আমার পরিবার জোর করে আমাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে,” জানান মামুন। তিনি ২০২১ সালের মার্চ মাসে ইউএইতে চলে যান।
২০২৩ সালের আগস্টে অনলাইনে দেওয়া সাক্ষাৎকারের পর মামুন অভিযোগ করেন, র্যাব কুলাউড়া মানবাধিকার অফিসে হানা দেয়, অফিসের নথিপত্র জব্দ করে এবং তাঁর চাচাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে অফিসটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
“তারা আমাদের কণ্ঠরোধ করতে এবং সকল প্রমাণ ধ্বংস করতে চায়,” মামুন বলেন।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশে ফিরলে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার, নির্যাতন বা হত্যা করা হতে পারে। “বাংলাদেশে আইনের শাসনের কোন অস্তিত্ব নেই। আমি যদি ফিরি, তাহলে আমাকে গুম বা হত্যা করা হবে,” বলেন মামুন।
এবিষয়ে স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করা হলে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। র্যাবের পক্ষ থেকেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। মামুনের অভিযোগও তেমনই একটি উদ্বেগজনক ঘটনার প্রতিচ্ছবি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।